বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৯ পূর্বাহ্ন
বাউফল প্রতিনিধি॥ মেহেদী। পুরো নাম মোহাম্মাদ মেহেদী হাসান। বয়স সাত (৭) বছর। বিলের শাপলা তুলে নিয়ে এসেছে বাজারে বেচতে। ‘শাপলা’ বেচার টাকায় কিনতে হবে ‘চাউল’। সম্ভব হলে কিছু ছোট মাছ! যা জানিয়েছে মেহেদী নিজেই।
মেহেদীকে প্রায়ই বাউফলের কালাইয়া বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে বসে শাপলা বিক্রি করতে দেখা যায়। গতকাল বুধবার (২১আগষ্ট) সকাল সকাল শাপলা নিয়ে বাজার রোডে নুহা মেডিকেলের সামনে বসে মেহেদী। আজ বেচা বিক্রি খারাপ।
প্রতিদিন ১১টার মধ্যে বেচা-বিক্রি শেষ হলেও আজ দুপুর ১টা নাগাদও বেচা বাকী সব। তার সাথে এসেছে দুই ভাই বোন। মাকসুদা আর নাজমুল। মাকসুদা (৫) শিশু শ্রেণীতে পড়ে। আর নাজমুলের বয়স আড়াই বছর। মেহেদীও স্কুলে যায়। প্রাইমারি স্কুলের ১ম শ্রেণীর ছাত্র।
মেহেদীর বড় এক বোন আছে। নাম জাহেদা (১৫)। ঢাকাতে স্থানীয় এক ধণী লোকের বাচ্চা দেখা শোনা করে।মাইনে বাবদ দেওয়া হয় ৩হাজার টাকা। তা তাঁদের কাছেই জমা থাকে।
জাহেদার বিয়ের জন্য। তাঁদের বাবা আবদুর রহমান সরদার। উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বড় ডালিমা গ্রামের বাসিন্দা। অভাবের সংসার তাঁদের। বিভিন্ন শাক-পাতা বিক্রি করে নুনে ভাতে চলে সংসার।
রহমান দিনে এক থেকে দেড়শত টাকা উপর্জন করে। ছেলে মেহেদী মাঝে মাঝে স্কুল বন্ধ দিয়ে শপলা তুলে। বিক্রি করে। বিক্রির টাকায় রহমানের কিছুটা উপকার হয়। মেহেদীর বয়স কম। ছোট। তবে পরিবারের কষ্ট সে বুঝে। তাই শাপলা তুলে বিক্রি করে। বড় হয়ে আর শাপলা বিক্রি করবে না।
চাকরি করবে। বাবাকে টাকা দিবে। মাকে টাকা দিবে। নিচের দিকে তাকিয়ে এসব কথা বলেন প্রতিবেদককে। কিছু সময় পর মাথা তুলে প্রতিবেদকের কাছে জানতে চায় শাপলা নিবেন। নেন। মুঠি ১০টাকা। যদিও কন্ঠ ভাঙা ভাঙা। মেহেদীর মা ফেরেযা বেগম জানায়, তাঁরা গরীব।
ঘরে অভাব। স্বামী-স্ত্রী মিলে বিভিন্ন শাক (কচু শাক, শাপলা, সাইচা শাক, থানথুনি পাতা) তুলে। তা বিক্রি করে। অনকে সময় তাও থাকে না। ব্যবসা করার মত মূলধন নাই।
কাজ করার মত শারিরিক অবস্থাও নাই তাঁর স্বামীর। বাউফল উপেজলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আরাফাত হোসেন বলেন, শাপলাকে মুলত আমরা আগাছা হিসাবে জানি। বর্ষা মৌসুমে বিলে খালে এগুলো বেশি চোখে পড়ে। সাধারনত জমি চাষের আগে এগুলো পরিস্কার করে ফেলা হয়।
তিনি আরো বলেন, শাপলা সবজি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এখন পর্যন্ত বাউফলে শাপলা বানিজ্যক ভাবে চাষ করা শুরু হয়নি।
Leave a Reply